ভূমিকম্প প্রতিরোধে কাপলারের জোড়া – গুরুত্ব এবং সুবিধা
Table of Contents

স্বাধীনতার ৫২ বছর ৭ মাস ২০ দিনের একটা দেশ আবারো স্বাধীন হলো , নাম হলো বাংলাদেশ ভার্সন টু।
বিশ্বের ৩৫ তম ও এশিয়ার ১৩ তম অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এই সদ্য নতুন করে স্বাধীন হওয়া দেশটি গত একযুগ শত দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অনাচারের মধ্যেও এগিয়ে গিয়েছে দৃপ্ত পদক্ষেপে।
এই উন্নয়নের দিক নির্দেশক হিসেবে আমরা দেখতে পেয়েছি সমগ্র দেশের কাঠামোগত উন্নয়ন।আর সেই কাঠামোগত উন্নয়নকেআমরা মাপতে পারি দিনকে দিন রডের বা স্টিলের চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে।গত অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট স্টিলের চাহিদা ছিল ৬১,১২,০০৯ মেট্রিক টন প্রায় , যা দুই বছর আগেও ২০২১-২২ অর্থবছরেও ছিল ৫৯,৪৫,৩৭০ মেট্রিক টন প্রায়।এই ক্রমবর্ধমান স্টিল বা নির্মাণ লৌহের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে এর উৎপাদনের সাথে জড়িত,জ্বালানী বৃদ্ধি , পরিবেশে নিঃসৃত কার্বনের পরিমান বৃদ্ধি , কাঁচামাল কেনার জন্য বছরে বছরে বৈদেশিক মুদ্রা খরচের পরিমান বৃদ্ধি তার সাথে সাথে ভূগর্বস্থ পানি ও প্রাকৃতিক গ্যাসের খরচ বৃদ্ধিতো আছেই।
আধুনিক নির্মাণ এখন সভ্যতা ধ্বংস করে নয় , সবুজ বিপ্লবের পক্ষে কথা বলে।আধুনিক নির্মাণে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে উচ্চ শক্তির রড যা কিনা প্রাচীন ধ্যান ধারণার রডের তুলনায় অনেক শক্তিশালী , সাশ্রয়ী , ভূমিকম্প সহনশীল এবং প্রকৃতি বান্ধব।সর্বোপরি এই উচ্চশক্তির রডের ব্যাবহার কমিয়ে আনতে দেশের মোট রড চাহিদার পরিমান ,বাঁচাতে পারে দেশের জ্বালানি , বৈদেশিক মুদ্রা ও এবং কার্বন নিঃসরণের হারও।
শুধুমাত্র উচ্চশক্তির রডই নয় , নির্মাণে রডের ব্যাবহার ও খরচ কমানোর জন্য পরিবর্তন আসছে নির্মাণ কৌশলেও।তেমনি একটি কৌশলের নাম হলো “কাপলার” বা রডের মেকানিকাল জয়েন্ট।
কাপলার বা রডের মেকানিকাল জয়েন্ট আসলে কি ?
নির্মাণে রডের সাথে রডের জোড়া লাগানোর আধুনিক পদ্ধতি।কাপলার, যা মেকানিকাল জয়েন্ট নামেও পরিচিত, একটি যন্ত্র যা দুটি রডের প্রান্তকে মেকানিক্যালি সংযুক্ত করে।কাপলার সাধারণত ধাতব তৈরি হয় এবং এটি রডের শেষ প্রান্তগুলোর মধ্যে থ্রেড ও পেঁচের মাধ্যমে একটি দৃঢ় সংযোগ স্থাপন করে।কাপলার ব্যবহারের মাধ্যমে রডের মধ্যে একটি শক্তিশালী, সুষম এবং স্থায়ী সংযোগ সৃষ্টি করা যায় যা ল্যাপিংয়ের তুলনায় অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকর।কাপলার ব্যবহারের সুবিধা হলো এটি দ্রুত এবং সহজে রডের সংযোগ স্থাপন করতে পারে, যার ফলে নির্মাণের সময় ও খরচ কমে আসে।
এখন যদি বলি ল্যাপিং কি ?
ল্যাপিং হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে দুটি রডের প্রান্ত একে অপরের উপর রেখা দিয়ে চাপানো হয়।এই প্রক্রিয়ায়, রডের শেষ প্রান্তগুলো একে অপরের সাথে মিশে যায় এবং একটি সমন্বিত অংশ তৈরি হয়।এটি সাধারণত স্টিলের রডে ব্যবহৃত হয় এবং কাঠামোগত সংযোগের জন্য তামার তার কিংবা ঝালাই ব্যাবহার হয়।ল্যাপিংয়ের মাধ্যমে তৈরি সংযোগে মূলত সিমেন্ট কনক্রিট বা অন্যান্য মেটেরিয়াল দ্বারা শক্তিশালী করা হয়।ল্যাপিং প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ হলেও,এটি অনেক সময় এবং শ্রমসাধ্য হতে পারে এবং নির্ভরযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে।
কাপলার কেন ল্যাপিং এর তুলনায় ভালো ?
এই কাপলার বা মেকানিক্যাল জয়েন্ট নির্মাণে ল্যাপিং এর তুলনায় শুধু মাত্র নির্মাণ কাজ সহজই করে না , জয়েন্টকে করে আরও অধিক শক্তিশালী , বাঁচায় নির্মাণের সময় ও খরচ।যা নির্মাণের জন্য প্রকাশিত আন্তর্জার্তিক কোডের মাধ্যমেও সমর্থিত , বিশেষকরে ভূমিকম্প সহনশীলতায় যা অতি আবশ্যক।

প্রথমেই যদি বলি নির্মাণ কাজ সহজেই কথা
কাপলার বা মেকানিক্যাল জয়েন্টের মাধ্যমে রডের সংযোগ একদম সহজ একটি কাজ।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত দুটি বৃহৎ স্টিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দুটি বিখ্যাত এবং আন্তর্জাতিক ভাবে স্বনামধন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের (ডেক্সটরা ও লেভিয়েট) কাপলার যথাক্রমে থাইল্যান্ড ও মালয়শিয়া থেকে আমদানি করে এবং তা ব্যাবহারকারীদের সরবরাহ করে। সরবরাহের সময় প্রতিষ্ঠান দুটি নির্মাণের চাহিদা মত রডকে লম্বায় কেটে তার প্রান্তভাগে স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে থ্রেড করে দেয়।
নির্মাণ সাইটে তাই রড কাটা , তামার তার দিয়ে বাঁধা কিংবা ঝালাইয়ের কোন বালাই নাই।একটি রডের শেষ প্রান্তের কাটা থ্রেডের মধ্যে ঐ রডের জন্য নির্দিষ্ট কাপলারের অর্ধেক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঢুকাতে হবে এবং অনুরূপভাবে অপর রডকেও সংযোগে আনতে হবে।খুবই সহজ এবং আনন্দদায়ক একটি কাজ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর বাংলাদেশে কাপলার তৈরী ও দক্ষ কারিগর দ্বারা সাইটে থ্রেড কাটার একটা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন।আশাকরবো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের এই শিক্ষকের কাছ থেকেও আমরা আধুনিক ও মানসম্পন্ন নির্মাণ সামগ্রী পাবো,যা আমাদের নির্মকৌশলকে আরও সহজ করে তুলবে।
দ্বিতীয়ত বলি নির্মাণের সময় বাঁচানোর উপকারিতা
যেহেতু রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দুটো তাদের নিজেদের ফ্যাক্টরিতে গ্রাহকের চাহিদামত সাইজের রড কেটে স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে রডের প্রান্তভাগে থ্রেড করে দেয় এবং সাথে কাপলারগুলো সুন্দর করে প্যাকেট করে দেয় ।তাই নির্মাণ সাইটে খুব সহজেই নির্ভুলভাবে যেই কোন শ্রমিকই খুবই কম সময়ের মধ্যে এটি ড্রইং বা প্ল্যান অনুসারে বসাতে বা ইন্সটল করতে পারে ।এবং এতে নির্মাণ সাইটে রড কাটা , তামার তার দিয়ে তা বাধা কিংবা ঝালাইয়ের মত ঝামেলা খুব সহজেই এড়ানো যায় ,যা নির্মাণ কাজের সময় অনেক সাশ্রয় করে ।
তৃতীয়ত মেকানিক্যাল জয়েন্ট বা কাপ্লার জয়েন্ট ল্যাপিং অপেক্ষা অধিক শক্তিশালি ও নিরাপদ
কারন ল্যাপিংএর শক্তি নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের উপর , যেমনঃ
১) কোড অনুসারে প্রত্যেক ডায়ামিটার ও রডের গ্রেড মেনে সঠিকভাবে ল্যাপিং দৈর্ঘ্য মানা হচ্ছে কিনা যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশে মানেনা এমনকি জানেও না ,
২) সঠিকভাবে তামার তার বা গুনার তার দিয়ে বাঁধা কিংবা ঝালাইয়ের উপর ,
৩) কনক্রিটের শক্তির উপর যা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ।
অর্থাৎ , ল্যাপিং এর শক্তি স্বাধীন না নির্ভরশীল অন্য অনেক কিছুর উপর ।
পক্ষান্তরে , কাপলার বা মেকানিক্যাল জয়েন্ট একটি স্বাধীন ও অধিক শক্তিশালি পন্থা দুইটি রডের জোড়া লাগানোর জন্য ।জেনে অবাক হবেন যে , সাধারনত রডের চেয়েও বেশি শক্তিশালি হয় একটি উন্নতমানের মেকনিক্যাল জয়েন্ট বা কাপলার জয়েন্ট ।কারন , কাপলারের জয়েন্টের অন্যতম শর্ত হল লোড টেস্টে রড ছিঁড়ে যাবে তাও কাপলারের জয়েন্ট থেকে দূরে কিন্তু জয়েন্ট ছিঁড়া যাবেনা ।এটি সম্পূর্ণ স্বাধীন যা কনক্রিটের শক্তি কিংবা অন্য কোন কিছুর উপর নির্ভর করেনা ।
তাই নিশ্চিন্তে এবং নিরাপদে লোড বহন করে শিখর থেকে শিকড়ে ।
চতুর্থত -ভূমিকম্প প্রতিরোধী:
ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন বা স্থাপনা তৈরি করতে হলে বিম-কলাম সংযোগস্থলে রডের সঠিকভাবে বিন্যাস এবং সব রডের মাটাম স্থাপন সঠিকভাবে করতে হয়।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ল্যাপিং বা ওয়েল্ডিং এর মাধ্যমে রডের সংযোগ দিতে হয় বিম এবং কলামের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে, যেখানে মোমেন্ট শূন্য আসবে ।তবে এই সংযোগ কখনোই বিম-কলাম সংযোগস্থলের ভেতরে বা কাছে দেওয়া উচিত নয়।কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক কারিগর রডের অপচয় কমাতে রডের সংযোগ বিম-কলাম সংযোগস্থলের কাছে বা ভেতরে করে থাকে।এতে ভবনটি ভূমিকম্পের সময় ধসে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে।রিবার কাপ্লার ব্যবহার করলে রডের সংযোগের স্থানের স্বাধীনতা বাড়ে,ফলে ভবন ভূমিকম্প প্রতিরোধী হওয়ার পাশাপাশি রডের অপচয়ও কম হয়।ভূমিকম্পের সময় বাইরের রড অনেক সময় ফাটল ধরে এবং ধসে পড়ে,ফলে ল্যাপিং এর মাধ্যমে সংযুক্ত রড লোড নিতে পারে না।রিবার কাপ্লার ব্যবহারের মাধ্যমে সংযুক্ত রড সহজেই লোড নিতে পারে।এজন্য রিবার কাপ্লার ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণে অপরিহার্য।
পঞ্চমত- রিবার কনজেশন বা রডের জট পরিহার করা যায়
উচ্চশক্তির রডের ব্যবহার যেমন বিম-কলাম জয়েন্টে রডের জট কমাতে সাহায্য করে,তেমনি কাপলারের ব্যাবহার সেইসব জয়েন্টে যদি রডের সংযোগ প্রয়োজন হয় সেই জট পরিহার অব্যাহত রাখে। যা কিনা কংক্রিটকে সহজেই জায়গা দেয় এবং জয়েন্টকে করে শক্তিশালী ও ভূমিকম্প সহ সকল ধরণের দূর্যোগে অধিক টেকসই উপযোগী।
এবারে আসি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা আমাদের দেশের জন্য তা হল খরচের তুলনা
মোটামুটি ২০ মিলিমিটার বা তার অধিক ডায়ামিটারের রডের জন্য কাপলার জয়েন্ট নিশ্চিন্তে সাশ্রয়ী ল্যাপিং এর তুলনায় ।কখনও কখনও দেখা যায় ১৬ মিলিমিটার রডের ক্ষেত্রে সমান কিংবা কিছুটা সাশ্রয় হয় ।
নিরাপত্তা ও খরচের কথা চিন্তা করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিল্ডিং কোড মোটা ডায়ামিটারের রডের ক্ষেত্রে ল্যাপিং না করে কাপলার ব্যবহারের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছে।তবে খরচের তুলনা করতে হবে , প্রজেক্টের সম্পূর্ণ ল্যাপিং খরচের সাথে সম্পূর্ণ কাপলার খরচের।
বেশিরভাগ সময় আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা যে ভুলটি করেন তা হল ,একটি কাপলার জয়েন্টের সাথে একটি ল্যাপিং জয়েন্টের তুলনা ।আমি এর আগেও বলেছি , ল্যাপিং এর ক্ষেত্রে সবথেকে বড় অসুবিধা হল দুইটি ।প্রথমত , বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ল্যাপিং লেন্থ ঠিকমতো হিসাব করা হয় না আন্দাজে ৫০গুন্ ধরা হয় এবং দ্বিতীয়ত ল্যাপিং সব জায়গায় দেয়া যায়না ।
ল্যাপিং শুধুমাত্র ল্যাপিং জোন অর্থাৎ নির্মাণের ফ্রেমে যেখানে মোমেন্ট শুন্য অবস্থায় থাকবে সেখানেই কেবল ল্যাপিং দেয়া যাবে ।কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় রড মিস্ত্রি বা কনট্রাক্টররা যেখানে রড শেষ হয় সেখানেই ল্যাপিং দেয় যা কোড পরিপন্থি এবং নির্মাণের জন্য অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ ।সুতরাং কোড অনুসারে (বিএনবিসি কোড ৮.২.৩.৩) ল্যাপিং লেন্থ ঠিক রেখে সেই অনুযায়ী রডের খরচ ধরতে হবে,ল্যাপিং জোন ঠিক রাখতে গেলে প্রজেক্টে বেশ খানিকটা রডের অপচয় হয় যা ল্যাপিং খরচের অন্তর্ভুক্ত ,পাশাপাশি রডের কাটিং খরচ , তামার তার বা ঝালাইয়ের খরচ এবং শ্রমিক খরচ তো আছেই ।
উল্লেখ্য যে , একটি প্রজেক্টে মোট ল্যাপিং এর সংখ্যার তুলনায় মোট কাপলার বা মেকানিক্যাল জয়েন্টের সংখ্যা,অন্ততপক্ষে শতকরা ২৫ ভাগ কম হয় যা নিঃসন্দেহে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক খরচের তুলনার জন্য ।
কত রকমের কাপলার ও থ্রেডিং রয়েছে ?
নির্মাণের চাহিদার উপরে ভিত্তি করে বিভিন্ন রকমের কাপলার বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে।
রিডিউসার থ্রেডেড কাপলার
(এটি রেগুলার থ্রেডেড কাপলারের মতই , তবে বড় এবং ছোট দুই ধরণের ডায়ামিটারের রডের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারে ) ,
হেডেড কাপলার বা টার্মিনেটর কাপলার বা এঙ্কর কাপলার
(যেই নামেই বলেন না কেন এটি রডের শেষপ্রান্তকে আটকে রাখার কাজ করে ) ,
এছাড়াও পানচিং কাপলার ও এমবিটি কাপলারের
কিছু ব্যাবহার আমরা দেখতে পাই যেখানে ব্যবহৃত রডের থ্রেড করা সম্ভব নয় সেখানে এগুলো উপযুক্ত ভেবে ব্যাবহার করা হয়।থ্রেডিং এর প্রকারভেদ নিয়ে যদি বলি , থ্রেডিং এর পদ্ধতির উপরে প্রথমত কেউ কেউ বলে টাইপ ওয়ান ও টাইপ টু দুই রকমের। এর মধ্যে টাইপ ওয়ান থ্রেড হলো সনাতন পদ্ধতিতে রডের উপরিভাগ চেঁছে ফেলে দিয়ে প্যাচ করা।যা আমার কাছে পছন্দ না এবং কোডের কাছেও না।সাধারণ কাজে এই ধরণের থ্রেড ব্যাবহার করা যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত হলো , টাইপ টু থ্রেড যা ফোরজিং করে থ্রেড করে এবং এতে সংযোগ ও রড দুটোরই গুনগত মান ঠিক থাকে। ব্যবহারের কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে থ্রেডিং আবার তিন রকমের ,টাইপ -এ-হাফ থ্রেড (অর্থাৎ কাপলারের লম্বায় অর্ধেকের পরিমান থ্রেড করা হয় ,যাতে এই রডে আধা ও অন্য রডের আধা মিলে কাপলারটি লাগানো যায়) ,টাইপ-বি-ফুল থ্রেড ( এখানে কাপলারের লম্বার সমান থ্রেড করা হয় যাতে পুরো কাপলারটি নির্মাণ কাজের সুবিধার জন্য একটি রডের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলা যায় ) ,টাইপ-সি- এক্সটেন্ডেড থ্রেড ( এখানে একটি কাপলারের সমান থ্রেড করেও আরো কিছুটা অধিক জায়গা থ্রেড করা হয় রডের গায়ে যাতে লক নাট নামের একটি মোটা নাট লাগানো যায়,যা কিনা মেকানিক্যাল জয়েন্টকে করে সবচেয়ে শক্তিশালী )।
তবে , খরচ ও কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে আমাদের দেশের বেশিরভাগ কাজের জন্যই হাফ থ্রেড বা টাইপ -এ এর চাহিদা বেশি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোথায় থেকে সেরা কাপলার সার্ভিস পাবেন ?
আমাদের দেশে দুটি বৃহৎ স্টিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এর ডেক্সটরা ও লেভিয়েট এর কাপলার ছাড়াও আরও বেশ কিছু ছোটখাট প্রতিষ্ঠান এই কাপলার সার্ভিস দিয়ে থাকেন।
তবে , সেসব ক্ষেত্রে বেশীরভাগ সময়ই দেখা যায় তা নিম্নমানের চায়না ও ভারত থেকে আমদানিকৃত ।বলাবাহুল্য , আমাদের দেশে কেউই এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কাপলার তৈরি করে না।যদি না কেউ জিঞ্জিরাতে নকল কাপলার না বানায়।কাপলারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল থ্রেডিং যা বড় দুটি প্রতিষ্ঠান বাদে কেউই স্ট্যান্ডার্ড মেনে করে না ।থ্রেডিং এর ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হল রডের ডায়ামিটার বা রডের পৃষ্ঠ ক্ষয় হয় কিনা ।বেশীরভাগ সাধারন প্রতিষ্ঠানগুলো সাইটে সাপোর্ট দেয়ার নামে যে পদ্ধতিতে থ্রেড করে তাতে রডের উপরপৃষ্ঠ মারাত্মকভাবে খতিগ্রস্থ হয় এবং ঐ সুনির্দিষ্ট জায়গায় রডের শক্তি অনেক কমে যায় ।
আমরা জানি , বর্তমানে বেশীরভাগ রড তৈরি হয় থারমো মেকানিক্যাল ট্রিটমেনট বা টিএমটি পদ্ধতিতে যাতে রডের উপরিপৃষ্ট সবচেয়ে বেশি লোড বহন করতে সক্ষম থাকে ।তাই রডের উপরিপৃষ্ঠ যদি কেউ চেঁছে ফেলে দেয় এবং তার পাশাপাশি নিম্নমানের কাপলার দিয়ে ঐ অংশ ঢেকে দেয় তাহলে ভূমিকম্পের সময় আপনার স্থাপনার ভিতরে রডের সংযোগ ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে ।
দুটি বৃহৎ স্টিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কাপলার আমদানি করে মালয়শিয়া এবং থাইল্যান্ড থেকে
পাশাপাশি উনারা অভিজ্ঞ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর তত্ত্বাবধায়নে ফোরজিং করে প্রথমে রডের মাথা ফুলিয়ে নিয়ে তারপর রোল থ্রেড করে যাতে রডের পৃষ্ঠদেশ থাকে অটুট এবং শক্তিশালী ঠিক আগের মতই , যার ফলে নিশ্চিত হয় ভূমিকম্প সহনশীলতা ।
এই প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে রড অর্ডার করলে একই সাথে আপনাকে আপনার ডিজাইন অনুসারে রড কেটে থ্রেড করে কাপলার সহ প্যাক করে পাঠাবে যাতে নির্মাণ সাইটে সহজেই আপনি তা বসিয়ে দিতে পারবেন কোন ঝামেলা ছাড়াই ।
উল্লেখ্য , সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের যেই পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক দেশের মাটিতে কাপলার তৈরী ও নির্মাণ সাইটে থ্রেডিং সার্ভিস সরবরাহ করার আধুনিক ও গুণগত পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন।
যদি উনি সম্পূর্ণ স্ট্যান্ডার্ড মেনে উৎপাদন ও ইনস্টলেশন এর দিক থেকে বৃহৎ দুইটি রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সমমানের কিংবা তাদের থেকে ভালো কিছু জাতিকে উপহার দিতে পারেন তবে ,
নিশ্চিন্তে এটি হবে আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্য যা আমাদের নির্মাণকে করবে আরও অধিক সাশ্রয়ী ও নিরাপদ।
সেরা কাপলার বুঝার উপায় কি ?
কাপলার ভালো নাকি খারাপ তা বুঝার জন্য পুরো মেকানিক্যাল জয়েন্টকে বুঝতে হবে।
অর্থাৎ কাপলার সরবরাহকারীকে কাপলার এবং থ্রেডিং উভয়ের গুনগত মান এমনভাবে নিশ্চিত করতে হবে যেন যখন পরীক্ষাগারে একটি জোড়া লাগানো রডকে টেনশন দিয়ে টানা হবে তা যেন কোনভাবেই সেই রডের সর্বোচ্চ লোড নেয়ার ক্ষমতা বা টেনসাইল স্ট্রেংথ কে অতিক্রম করতে পারে।
অর্থাৎ উক্ত টেনসাইল স্ট্রেংথে রড ছিঁড়ে যাবে বা ফেইল করবে কিন্তু কোন ভাবেই কাপলার ছেড়া যাবেনা , খুলে চলে আসা যাবেনা এমনকি রডের গায়ে থ্রেডিং অংশে কিংবা আশেপাশেও ছেড়া যাবেনা। রড ছিড়বে থ্রেডিং অংশ থেকে দূরে। তা নাহলে মেকানিক্যাল জয়েন্টে ঝামেলা আছে বুঝতে হবে।

সব কথার শেষ কথা কোড কথা
বিশ্বের রডের সংযোগের সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতিটি কোডে থাকবে না তাতো হয় কি ?বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ২০২০ এ মেকানিক্যাল জয়েন্ট কাপলারের কথা বলা হয়েছে।আর এসিআই এর কথা আর কি বলবো , যাকে অনুকরণ ও অনুসরণ করে বিএনবিসি লেখা হয় সেখানেও অনেক আগে থেকেই এই বিষয়ে বলা হয়েছে। এসিআই ৩১৮-১৯ এ মেকানিক্যাল জয়েন্ট নিয়ে খুঁজলে অনেক দিক নির্দেশনা পাবেন ইনশাল্লাহ।বিল্ডিং কোডের ৮.২.১২.৩ (ডি) অনুসারে স্পেশাল মোমেন্ট ফ্রেমে টাইপ ওয়ান থ্রেডিং করা কাপলার ব্যাবহার না করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছে। একই সাথে ৮.২.১২.৩(এ) থেকে ৮.২.১২.৩(ডি) মেম্বারের যেকোন জায়গায় মেকানিক্যাল জয়েন্ট বা কাপলার ব্যাবহার করা যাবে সে কথাও বলেছে।
যা এই অধম উপরের আলোচনায় বিস্তারিত অনেক বারই উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি।তাই প্রকৌশলী ও ঠিকাদার বৃন্দরা আসুন নির্মাণ কাজকে আধুনিক , সহজ , টেকসই , মজবুত ও সাশ্রয়ী করার জন্য ল্যাপিং এর দিন করি শেষ কাপলারে রড জোড়া লাগিয়ে গড়ি আধুনিক বাংলাদেশ
লেখাটি গত ৭ই অক্টবোর , ২০২৪ সে কালেরকন্ঠ অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত হয়েছে https://www.kalerkantho.com/online/miscellaneous/2024/10/07/1432818